Reviews by tag: শীর্ষেন্দু

বইটা বেশ সুন্দর। ছোটখাটো ছিমছাম ধরণের। খুব বেশি প্যাঁচঘোঁচ নেই, তত্ত্বকথাও নেই কোনো। আছে শুধু একরাশ স্মৃতির বয়ান। ইন্দ্রজিৎ-এর জীবনকে একইসাথে বর্তমান আর অতীতে রেখে গল্প বলে যাওয়ার কাজটি দারুণ মুনশিয়ানার সাথে সম্পন্ন করেছেন শীর্ষেন্দু। উপন্যাসের বয়ানেও নতুন আঙ্গিকের প্রয়োগ ঘটিয়েছেন। মূলত উত্তম পুরুষে বর্ণিত হলেও উপন্যাসটির এক পর্যায়ে বিশেষ একটি অবস্থার বর্ণনা করার সময় তৃতীয় পুরুষে বর্ণনা করে গেছেন, কেননা যে মানুষের কথা তিনি বলছেন সে মানুষ আর এখনকার মানুষ এক নয়। ব্যাপারটা দারুণ লেগেছে আমার কাছে। কিছু উপমা ছিল যাকে বলে আউটস্ট্যান্ডিং, যেমন-এমোনিয়ামের গন্ধ এসে নাকে ঘুষি মারা, পায়রার ডানার শব্দে বিস্মৃতির পরত ভেঙে পড়া, কিংবা লজ্জায় মাথা নুইয়ে দেশলাইয়ের নিভে যাওয়া ইত্যাদি ইত্যাদি। কিছু উপমা ছিল চিত্ররূপময়।

তখন শীতকাল; মাঘের এক রাতে আমরা সব ভাই বোনেরা মিলে আমাদের বাড়ির সামনের বিশাল চন্দ্রালোকিত ফসল কাটা মাঠে হেটে বেড়ালাম। বড় আপা আমাদের শোনালো সিনডেরেলার গল্প। আমরা ছোটরা সে গল্প হা করে শোনার পর তাঁকে ধরলাম আরও গল্প বলার জন্য, কিন্তু বড় আপা বলল- তোদের মেঝ আপাকে গিয়ে ধর সে আরও অনেক গল্প জানে। কিন্তু মেঝ আপা তখন হ্যারিকেনের আলোয় এক বিশাল গাবদা বইয়ের মাঝে মুখ লুকিয়ে আছে। অদ্ভুত সে বইয়ের প্রচ্ছদ। পুরোটা কালো রঙের, মাঝের দিকে মানুষের একটা ছবি কেবল তাতে। মাথায় কেমন এক কাপড় বাঁধা, মানুষটার শারীরিক গঠন দেখে বোঝার উপায় নেই সে পুরুষ না মহিলা। বাইয়ের নাম জিজ্ঞেস করাতে মেঝ আপা উত্তর দিল- “পার্থিব”। লেখকের নাম শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়।