ইউভাল নোয়াহ হারারি তার বিখ্যাত বই “স্যাপিয়েন্স”-এ বলেছিলেন মানুষের সভ্যতাকে সুগঠিত করতে সাহায্য করেছে মানুষের বানানো বিভিন্ন গল্প। কথাটাকে যদি আরও একটু সামনে বাড়িয়ে নিই তাহলে বলা যায়, গল্প যদি না থাকত তাহলে মানুষ হয়তো তার আজকের অবস্থানে আসতেই পারত না। মানুষই বিভিন্ন গল্প বানায় আবার মানুষই সেসব গল্প বিশ্বাস করে। কিছু গল্পের স্থানভেদে চরিত্রগুলো আলাদা হলেও গল্পের কাঠামোটা একই থাকে, অর্থাৎ গল্পের ভেতরের বার্তাটা কখনো পালটে যায় না। আবার কিছু গল্প থাকে, যা ওই স্থানকে, ওই জায়গার মানুষকে, তাদের লৌকিক আচার-আচরণ, মূল্যবোধ এবং বিশ্বাসকে প্রতিনিধিত্ব করে। এইরকমই কিছু গল্পের সমষ্টি হল তুহিন তালুকদারের “বিশ্বলোকের গল্প” বইটি।
বইয়ের নামের মাঝেই ব্যাপারটা বেশ স্পষ্ট যে এই বইতে বিশ্বের কিছু লোকগল্পের অনুবাদ রয়েছে। মোট বারোটি দেশের চৌদ্দটি গল্প নিয়ে সাজানো হয়েছে বইটি। যেখানে এশিয়া ও ইউরোপ মহাদেশ থেকে চারটি দেশের গল্প নেয়া হয়েছে আর অন্যান্য মহাদেশ থেকে নেয়া হয়েছে একটি করে গল্প। আফ্রিকার গল্পটি তাঞ্জানিয়ার, উত্তর আমেরিকার গল্পটি যুক্তরাষ্ট্রের স্থানীয় ইরোকুয়ের জাতির আর দক্ষিণ আমেরিকার গল্পটি ব্রাজিলের। আরবের যে গল্পটি লেখক বাছাই করে নিয়েছেন তা মূলত বিখ্যাত “আরব্য রজনী” থেকেই নেয়া। আবার আমাদের এই উপমহাদেশ থেকে তিনটি গল্প অনূদিত করেছেন অনুবাদক।
মূলত অনুবাদ বই হলেও অনুবাদকের নিজস্ব স্বকীয়তায় আলাদা ব্যঞ্জনা প্রকাশ পেয়েছে বইটিতে। যেহেতু এই বইটি অনুবাদ করা হয়েছে মূলত শিশু-কিশোরদের কথা মাথায় রেখে তাই বইয়ের ভাষা হয়েছে অত্যন্ত প্রাঞ্জল। বলছি না যে বইয়ের ভাষা দক্ষিণারঞ্জন মিত্র মজুমদারের “ঠাকুরমার ঝুলি”র মতন প্রায় মুখের ভাষার কাছাকাছি, বরঞ্চ বাচ্চারা যাতে বুঝতে পারে সেই অনুযায়ী। অন্তত বই পাঠে এটুকু মনে হয়েছে এই বইটি শিশুদের পড়তে দিলে তাদের আলাদা করে বোঝার জন্যে কোন অভিভাবক লাগবে না, নিজেরাই পড়তে পারবে। জানি না এখনকার বাচ্চাকাচ্চারা উপদেশ শুনতে পছন্দ করে কিনা অন্তত আমার ওই বয়সে উপদেশ শুনতে একদমই ভালো লাগত না। আর উপদেশের কথা পড়তে তো আরও বিরক্তি। ভাগ্যক্রমে এই বইটিতে সেই ব্যাপারটি প্রায় নেই বললেই চলে। অনুবাদক প্রায় শ খানেক গল্প থেকে বাছাই করে সেই গল্পগুলোই অনুবাদ করেছেনে যেখানে এই উপদেশের অত্যাচারটুকু প্রায় না থেকেই রয়েছে একটি নিখাদ গল্প। আবার উপদেশ একেবারে না থাকলেও কিছু সত্যবচন রয়েছে যা শিশুদের মনের উপর প্রভাব ফেলবে বলে ধারণা করা যায়। প্রতি গল্পের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ অলংকরণ বইটিকে আলাদা গুরুত্ব দিয়েছে।
যারা মেলায় নিজের বাচ্চাদের জন্যে ভালো কিছু বই খুঁজছেন তাদের জন্য এই বই একটা উপযুক্ত বই হবে বলে মনে করি। বইটি প্রকাশ করেছে মাওলা ব্রাদার্স।
তুহিন তালুকদারের “বিশ্বলোকের গল্প”
Mehedie Hassan https://bookshelvez.com//Attachments/BookCovers/4.jpgইউভাল নোয়াহ হারারি তার বিখ্যাত বই “স্যাপিয়েন্স”-এ বলেছিলেন মানুষের সভ্যতাকে সুগঠিত করতে সাহায্য করেছে মানুষের বানানো বিভিন্ন গল্প। কথাটাকে যদি আরও একটু সামনে বাড়িয়ে নিই তাহলে বলা যায়, গল্প যদি না থাকত তাহলে মানুষ হয়তো তার আজকের অবস্থানে আসতেই পারত না। মানুষই বিভিন্ন গল্প বানায় আবার মানুষই সেসব গল্প বিশ্বাস করে। কিছু গল্পের স্থানভেদে চরিত্রগুলো আলাদা হলেও গল্পের কাঠামোটা একই থাকে, অর্থাৎ গল্পের ভেতরের বার্তাটা কখনো পালটে যায় না। আবার কিছু গল্প থাকে, যা ওই স্থানকে, ওই জায়গার মানুষকে, তাদের লৌকিক আচার-আচরণ, মূল্যবোধ এবং বিশ্বাসকে প্রতিনিধিত্ব করে। এইরকমই কিছু গল্পের সমষ্টি হল তুহিন তালুকদারের “বিশ্বলোকের গল্প” বইটি।
তুহিন তালুকদারের “বিশ্বলোকের গল্প”
https://bookshelvez.com//Attachments/BookCovers/4.jpg